Monday, July 13, 2020

খ্রিস্টান পাদ্রিদের কাছ থেকে আয়া সোফিয়াকে নিজ অর্থে ক্রয় করে মসজিদ বানিয়েছিলেন সুলতান ফাতিহ

১৪৫৩ সালে ইস্তাম্বুল বিজয়ের পর খ্রিস্টান পাদ্রিদের কাছ থেকে নিজ অর্থায়নে আয়া সোফিয়াকে কিনেছিলেন সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ। এরপর তিনি মসজিদ হিসেবে আয়া সোফিয়ার সম্পদকে ওয়াকফ করেন।
সম্প্রতি দুনিয়াখ্যাত নিউজ মিডিয়া আল-জাজিরার এক অনুসন্ধান মূলক প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে এসেছে।
গত শুক্রবার (১০ জুলাই) ১৯৩৪ সালে মসজিদ থেকে আয়া সোফিয়াকে জাদুঘরে রূপান্তরের সিদ্ধান্তকে বাতিল ঘোষণা করে তুরস্কের প্রশাসনিক আদালত। এরপরই এক রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি করে আয়া সোফিয়াকে পূনরায় মসজিদে রূপান্তরের যুগান্তকারী নির্দেশনা দেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান।
আয়া সোফিয়াকে পূনরায় মসজিদে রূপান্তরের বিরোধিতা করে আসছে আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও গ্রিসসহ দুনিয়ার খৃষ্টান প্রধান দেশ ও নেতৃবৃন্দ।
তাদের এ বিরোধিতাকে অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করছেন উসমানী সাম্রাজ্যের ইতিহাস বিষয়ক গবেষকগণ। তারা জানান, ইস্তাম্বুল বিজয়ের পর আয়া সোফিয়াকে খ্রিস্টান পাদ্রিদের কাছ থেকে কিনে নিয়েছিলেন সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ। তিনি তা মসজিদের জন্যই ওয়াকফ করেন। সুতরাং আয়া সোফিয়াকে মসজিদ হিসেবে ব্যবহারে নীতিগত কোনো বিরোধ থাকলো না।
১০ জুলাই আয়া সোফিয়াকে পূনরায় মসজিদে রূপান্তরের সিদ্ধান্তের পর ২৬ বছর আগে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের দেয়া এক সাক্ষাৎকার টাইমলাইনে আসে।
কুয়েতের ‘মুজতামা’ পত্রিকায় ১৯৯৪ সনে এপ্রিল (১০৯৭তম) সংখ্যায় প্রকাশিত সাক্ষাতকারটিতে এরদোগান বলেছিলেন, “যত বাধা বিপত্তি আসুক না কেন আয়া সোফিয়া-কে গীর্জায় রূপান্তরিত করতে দেয়া হবে না। আয়া সোফিয়া-কে পুনরায় গীর্জায় রূপান্তরিত করা নিছক কল্পনা মাত্র।”
ওই সাক্ষাতকারে এ কথার ব্যাখ্যায় এরদোগান বলেছিলেন, “আয়া সোফিয়াকে মুসলিমদের জন্য ওয়াকফ করা হয়েছে এবং এটি এমনই (মুসলমানদের জন্য ওয়াকফকৃত) থাকবে।”
তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে সকলেই অবগত যে, সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ ইস্তাম্বুল বিজয়ের সময় কোনো গীর্জা দখল করেননি, এমনকি আয়া সোফিয়াকে তিনি নিতান্তই নিজের অর্থ সম্পদের বিনিময়ে ক্রয় করে মসজিদে রূপান্তর করে মুসলিম উম্মাহর জন্য ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন। তিনি (সুলতান ফাতিহ) বলেছিলেন, “এটিকে অন্য উদ্দেশ্য যদি কেউ ব্যবহার করতে চায়, তবে তার উপর আল্লাহর এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর লা’নত”
আয়া সোফিয়ার ইতিহাস:
❤ আয়া সোফিয়ার ইতিহাসের সূচনা ৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে।
❤ বাইজান্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ান ইস্তাম্বুলের গোল্ডেন হর্ণ নামের এক জায়গায় একটি বিশাল গির্জা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।
❤ সে সময় বিশাল গম্বুজের এ গির্জাকে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় গির্জা বা দালান বলে মনে করা হতো।
১২০৪ সালে ক্রসেডারদের হামলার ঘটনা বাদে কয়েক শতাব্দী ধরে আয়া সোফিয়া বাইজান্টাইনদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
অটোমান (ওসমান) বংশীয় সুলতান তৃতীয় মুহাম্মদ ১৪৫৩ সালে বাইজান্টাইন শাসকদের হাত থেকে ইস্তাম্বুল দখল করে নেন।
❤ এর আগে শহরটির নাম ছিল কনস্টান্টিনোপল। ইস্তাম্বুল দখলের পর বিজয়ী মুসলিম বাহিনী প্রথমবারের মতো গির্জার ভেতরে সালাত আদায় করেন।
১৪৫৩ সালে ইস্তাম্বুল বিজয়ের পর খ্রিস্টান পাদ্রিদের কাছ থেকে নিজ অর্থায়নে আয়া সোফিয়াকে কিনে নিয়েছিলেন সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ।
এটা কিনে নেয়ার পর এর সম্পদকে ওয়াকফ করেন তিনি।
❤ ওসমানিয়া (অটোম্যান) শাসকরা এরপর হায়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করেন।
❤ মসজিদের চারপাশে চারটি মিনার তৈরি করা হয়।
এরপর কয়েকশ বছর ধরে হায়া সোফিয়া ছিল অটোম্যান মুসলিম সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু।
১৯৩৪ সালে তুরস্কে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা করেন মোস্তফা কামাল পাশা। যিনি কামাল আতাতুর্ক নামেই পরিচিত।
❤ ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ইসলাম নির্মূল অভিযান শুরু করা হয়।
❤ ধর্মনিরপেক্ষতা চালু করার প্রক্রিয়ায় আয়া সোফিয়াকে জাদুঘরে পরিণত করা হয়।
আয়া সোফিয়া এখন তুরস্কের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান হিসেবে স্বীকৃত।
❤ প্রতিবছর ৩৭ লক্ষ পর্যটক এটি দেখতে আসেন।
গীর্জা বিক্রি এবং তা কিনে নিয়ে মসজিদে রূপান্তরের ইতিহাস:
আধুনিক যুগে গীর্জা কিনে মসজিদে হিসেবে ব্যবহারের ঘটনা অনেক। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা দিনদিন প্রার্থনায় অলস হয়ে যাবার কারণে খালি হয়ে যায় বিভিন্ন গীর্জা। পরে মুসলিমরা তা কিনে নিয়ে মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করেন।
এমনই একটি মসজিদ হলো নিউইয়র্ক ব্রুকলিন মসজিদ। ১৯০৭ সালের আগে এটি গীর্জা হিসেবে ব্যবহার হতো। মুসলিমরা তা ক্রয় করে মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে দীর্ঘদিন যাবৎ।
গীর্জাকে ক্রয় করে মসজিদে রূপান্তরের তালিকায় রয়েছে আয়ারল্যান্ড ডাবলিন মসজিদ। এ মসজিদটি আগে একটি গীর্জা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ১৩শ শতাব্দীর ইংরেজদের গীর্জার শৈলীতে ১৮৬০-এর দশকে ডোনোর প্রেসবিটারীয় গীর্জাটি নির্মিত হয়। ১৯৮৩ সালে এটি আয়ারল্যান্ড ইসলামী ফাউন্ডেশন কিনে নেয় ও মসজিদে রূপান্তরিত করে।
এ তালিকায় আরো রয়েছে জার্মানির ওয়েস্টফালিয়ার ফেইজ ঈমান মসজিদ। ২০১৯ সালে পাকিস্তানের একদল ব্যবসায়ী জার্মানির ওয়েস্টফালিয়া নর্থ রাইল প্রদেশের হেগেন শহরে একটি প্রাচীন গীর্জা ক্রয় করে সেখানে মসজিদ নির্মাণ করেন।
পাকিস্তানের মুসলিম ব্যবসায়ী এ গীর্জাটি ৩ লাখ ৮০ হাজার পাউন্ড দিয়ে ক্রয় করেন। জেসুস হিলিগেন নামক প্রাক্তন গীর্জাটির নাম পরিবর্তন করে ‘ফেইজ ঈমান’ নামকরণ করা হয়।
এ ছাড়াও ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে খৃষ্টানদের কাছ থেকে গীর্জা কিনে মসজিদ বানানোর ঘটনা অনেক। কিন্তু আয়াসোফিয়া দীর্ঘ ৫০০ বছর মসজিদ হিসেবে থাকার পরও অনৈতিক ভাবে এটাকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়। মোস্তফা কামাল পাশা (কামাল আতাতুর্ক) ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ইসলাম নির্মূল অভিযান শুরু করেন। এর অংশ হিসেবেই আয়া সোফিয়াকে গীর্জায় রূপান্তর করা হয়।
দীর্ঘ ৮৬ বছর পর তুরস্কের শীর্ষ আদালতের রায়ের মাধ্যমে আয়া সোফিয়াকে পূনরায় মসজিদে রূপান্তর করার ঘটনায় পশ্চিমা দুনিয়ার মায়াকান্না মুসলিম দুনিয়ায় অনেক প্রশ্ন সঞ্চার করেছে।
তথ্য সহায়তা: Al Jazeera English.

No comments:

Post a Comment

ছয় যমজ সন্তান নিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন জার্মান নারী

  ছয় যমজ সন্তান নিয়ে এক দশক আগে ইসলাম গ্রহণ করেছেন জার্মানির রুকসানা তামিজ। মুসলিম হবার পর হিজাব পরা শুরু করেন এবং পরিপূর্ণ ইসলামী জীবন অনুশ...