Saturday, July 11, 2020

মহাকাশ স্টেশন সম্পর্কে চমকপ্রদ কিছু তথ্য!




আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন, বা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন একটি বিশাল মহাকাশযান, যা পৃথিবীর কক্ষপথে পরিভ্রমণ করছে। এটি পৃথিবী থেকে ২৪০ মাইল উপরে ভেসে বেড়াচ্ছে। মহাকাশচারীদের জন্য বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার হয় এ মহাকাশযানটি। এ মহাকাশযানে ছয়জন স্পেস-ক্রু ছাড়াও মহাকাশে অতিথি অভ্যর্থনার ব্যবস্থা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, রাশিয়া সহ মোট ১৫ টি দেশের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল এ ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন। আন্তর্জাতিক সমঝোতার অংশ হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনকে মানব সভ্যতার একটি অনন্য অর্জন বলে গণ্য করা হয়। এটি ১৯৯৮ সালের ২০ নভেম্বর লঞ্চ করা হয়। চলুন জেনে নেয়া যাক এ ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন সম্পর্কে চমকপ্রদ কিছু তথ্য।

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন খুব দ্রুত চলছে:

ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন প্রতিদিন পৃথিবীকে পাক্কা ১৬ বার প্রদক্ষিণ করছে। গাণিতিকভাবে বলতে গেলে পৃথিবীতে ছোঁড়া একটি বুলেটের ১০ গুণ বেগে- প্রতি ঘন্টায় ২৮,০০০ কিলোমিটার বেগে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে মহাকাশযানটি।

খাওয়া-দাওয়া? টয়লেট?

মহাকাশযান এর কথা এলে এ দুইটি প্রশ্ন সবার মাথায় ঘুরপাক খায়। নভোচারীগণ খাওয়া-দাওয়া করেন কীভাবে? আর টয়লেটের ব্যবস্থাই বা কী?

ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে দুইটি টয়লেট রয়েছে, যা নভোচারীরা প্রয়োজনে ব্যবহার করেন। এমনকি নভোচারীদের মূত্র ফিল্টারিং করে পানযোগ্য পানিতে পরিণত করা হয়।

সামান্য পরিমাণ তরল পদার্থের ছিটেফোঁটাও ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন এ বিশাল দুর্ঘটনার সূত্রপাত ঘটাতে পারে। সেখানে তরল পানীয় ব্যাগ থেকে স্ট্র এর মাধ্যমে পান করা হয়। নভোচারীগণ খাদ্য গ্রহণ করেন ট্রে থেকে, যেগুলো ম্যাগনেট এর মাধ্যমে মহাকাশযানের সাথে আটকানো থাকে।

আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান:

রাতের আকাশে পৃথিবী হতে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন হচ্ছে ৩য় সর্বোচ্চ উজ্জ্বল বস্তু, যা সম্পূর্ণ খালি চোখে দেখা যায়। আকাশে অতি দ্রুততার সাথে ছোটা বিমান সদৃশ আলোই হল ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন। সকাল এবং সন্ধ্যায় এটি সবচেয়ে ভাল দৃশ্যমান হয়।

শারীরিক পরিবর্তন বিদ্যমান:

ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে মহাকাশচারীগণ বিভিন্ন ছোট থেকে বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান। পায়ের পাতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চার মত কোমল হয়ে যায়। এ ছাড়াও গ্র‍্যাভিটির অভাবে শরীরের হাড়গুলো যাতে ক্ষয়ে না যায়, সে জন্য নভোচারীগণ বিভিন্ন শারীরিক ব্যায়াম করেন।

ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন এ ইন্টারনেটের সুব্যবস্থা:

ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন এর সকল বাসিন্দাদের কাছেই রয়েছে ল্যাপটপ। এমনকি তাঁরা ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত হয়ে তাদের পরিবার কিংবা বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। ইন্টারনেট থাকার দরুন আপনার আমার মত লাইভ টিভি কিংবা সিনেমা উপভোগ করার সু্যোগ তো থাকছেই। আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে ৬০০ মেগাবিট/সেকেন্ড গতির ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে যা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলেই আশা করা যায়।

এটি অত্যন্ত বিশাল:

মানুষের তৈরিকৃত সর্ববৃহৎ বস্তু এই ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন। এটি ৩৫৭ ফুট লম্বা। এ বৃহৎ মহাকাশযানটি এর ৪৬০ টন ভর নিয়ে মহাকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এটি একটি আদর্শ গবেষণাগার:

নভোচারীর পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রবিশেষে পারদর্শী বিজ্ঞানী এবং গবেষক ও রয়েছেন এ মহাকাশযানে। এরই সুবাদে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে সর্বদা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতেই থাকে।

আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে সময়ের পরিবর্তন:

মজার ব্যাপার হল, ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন থেকে মহাকাশচারীগণ পৃথিবীতে অপেক্ষাকৃত কম বয়স নিয়ে ফিরে আসেন। মহাকাশযানটির অতি দ্রুত বেগের কারণে সময় পৃথিবীর চেয়ে ধীরে কাটে সেখানে। তবে এ সময় যে বিশাল একটি সংখ্যা, তেমন কিছু না। মহাকাশযানটিতে ৬ মাস কাটানোর পর নভোচারীগণ পৃথিবীতে থাকা সাধারণ মানুষ এর চেয়ে মাত্র ০.০০৫ সেকেন্ড ছোট হন।

সহজ কাজও দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে:

পৃথিবীতে যেসব কাজ সহজ, ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে সেসব কাজ রীতিমত দুঃসাধ্য বলা চলে। চুল কাটার মত দৈনন্দিন কাজ সাড়তেও সেখানে বিশাল ভোগান্তি পোহাতে হয় নভোচারীদের। ভ্যাকুয়াম এ সংযুক্ত থাকা ক্লিপার এর মাধ্যমে চুল কাটেন নভোচারীগণ। এ প্রক্রিয়ায় অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হয় নভোচারীদের। কেননা সামান্য একটি চুলসদৃশ বস্তুও মহাকাশযানের বিভিন্ন ফিল্টার কিংবা যন্ত্রকে নিমিষেই অচল করে দিতে পারে।

যে কেউ চাইলে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ঘুরে দেখতে পারে:

ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন মানুষকে এক হয়ে ভাবতে সাহায্য করে আসছে। এমনকি আপনি চাইলেও এর অংশ হতে পারেন। গুগল স্ট্রিট ভিউ ব্যবহার করে মহাকাশযানটিকে পৃথিবী থেকে দেখতে পারেন যে কেউ।

তথ্যসূত্র: নাসা/গুগল আর্টস অ্যান্ড কালচার


No comments:

Post a Comment

ছয় যমজ সন্তান নিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন জার্মান নারী

  ছয় যমজ সন্তান নিয়ে এক দশক আগে ইসলাম গ্রহণ করেছেন জার্মানির রুকসানা তামিজ। মুসলিম হবার পর হিজাব পরা শুরু করেন এবং পরিপূর্ণ ইসলামী জীবন অনুশ...